আমি জানি কার লেখা কপি পেষ্ট করা অপরাধ তার পর ও আমি লেখাটি কপি পেষ্ট করলাম কারন সবাইকে সতর্ক করার জন্য বিশেষ করে মেয়ে দের যেন সবাই একটু সতর্ক দৃষ্টি রেখে চলাফেরা করে । আমি আবার ও বলছি এই লেখাটির সব টুকুই কপি পেষ্ট করা।
তেমনি একটি সংবাদ হঠাৎ করেই সেদিন ছুটে এল আমার কাছে। ধর্ষণের সংবাদ। প্রথমে মনে হলো, এ আর নতুন কি? প্রতিনিয়তই এসব ঘটছে। প্রকাশও হচ্ছে। আমার মনে হয়, এমন কোনো দিন নেই, যেদিন পত্রিকার পাতায় ধর্ষণের কোনো সংবাদ প্রকাশ পায়নি। তবে ধর্ষণ সংক্রান্ত যে খবরটি সচরাচর চোখে পড়ে না, সেটি হচ্ছে ধর্ষকের শাস্তির সংবাদ।
যেটা বলছিলাম, ঢাকার মহানগর দায়রা জজের আদালত সূত্র থেকে একদিন খবর পেলাম, এক মর্মস্পর্শী ধর্ষণ ঘটনার। এক মা ও তাঁর কলেজ পড়ুয়া মেয়ের ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা।
নেমে পড়লাম মাঠে। কিন্তু ঘটনার গভীরে ঢুকে শিউরে উঠলাম। আঁৎকে উঠলাম। হাহাকার করে উঠলাম। তারপর স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কারণ, এ এমন এক ঘটনা যা বলা যায় না, লেখা যায় না, প্রকাশ করা যায় না সংবাদ আকারে। আমি নিশ্চিত, সেটা করতে পারলে হইচই পড়ে যাবে। বিবেকবানরা প্রতিবাদে ফেটে পড়বেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন। অন্য সংবাদ মাধ্যমগুলোও হুমড়ি খেয়ে পড়বে। কিন্তু শেষমেশ সবাই হাত গুটিয়ে নেবেন। মুখ বুজে যাবেন। সবাই বুঝবেন, কাজটি করলে আরো বেশি সর্বনাশ হয়ে যাবে ওই পরিবারটির।
ঘটনাটি পুরো জানার পর একজন সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে যখন পরামর্শ করলাম, তিনি শুনে অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলেন। বললেন, 'কিসের রিপোর্ট! কিসের মামলা! ধর্ষকদের গুলি করে মারা উচিত।'
দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির হস্তক্ষেপ আর জামিনের ঘটনায় অবাক হয়ে যায় অসহায় পরিবারটি। হতবাক হয় পুলিশও। আইনজীবীরাই বা কী করবেন? আদালতে তাঁরা সোচ্চার হতে পারেন না, জানাজানির ভয়ে। একই কারণে প্রচারমাধ্যমকে জানানো যাবে না। পুলিশকেও কাজ করতে হচ্ছে গোপনে। একটু ভুল হলেই অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
যোগাযোগ করি ওই মানবাধিকার সংস্থার প্রধানের সঙ্গে। তিনি বললেন, সমাজ আর বাস্তবতার নিরিখে এ ব্যাপারে এই মুহূর্তে তিনি কিছুই বলতে ইচ্ছুক নন। একটা সুন্দর সময়ের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। প্রয়োজন হলে তিনি মুখ খুলবেন।
এদিকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে গেছে ধর্ষকরা। তারা এর প্রতিশোধ নেবে বলে হুমকি দিচ্ছে। হুমকি পেয়ে হতভাগী আর অভাগী আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না। তাঁরা এখন নিজ ঘরে বন্দি। বাইরে বের হতে ভয় পান। কী করবেন এখন এই দুই নির্যাতিতা?
এদিকে অভাগীর ভাই দুর্ভাগার অবস্থাও কম করুণ নয়। অসহায় মানুষের অধিকার আদায়ে যিনি সোচ্চার, তিনিই আজ সবচেয়ে অসহায়। কতজনার সংবাদ পরিবেশন করেন তিনি! কত মানুষের কত সুখ-দুঃখের কথা বলেন! কত অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে ফেটে পড়েন সাংবাদিকতার হাতিয়ার নিয়ে! অথচ নিজের ঘরে আজ যে মর্মন্তুদ সংবাদ রচিত হয়েছে, তা তিনি চাপা দিয়ে রেখেছেন নীরব কান্নায়। সব রাগ, সব ক্ষোভ, সব আগুন আজ কষ্ট হয়ে গলে পড়ে চোখের জলে। একজন সাংবাদিকের জীবনে এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে?
============
এই ধরনের দূর্ভাগ্য আর কোন পরিবারে নেমে না আসুক সেটাই সবার কামনা। সেই সাথে আমাদের নিজেদেরও সতর্ক হতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে এবং সংযত হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং প্রতিবাদী হতে হবে। চুপ করে সহ্য করে গেলে সর্বনাশ হতে পারে অন্য কারোও।
সংগৃহীত:-http://www.facebook.com/notes/syed-ayon/প্রতিটি-মেয়ে-এই-লেখাটি-পড়লে-ভাল-হয়/320508451308364সংগৃহীত
অপরাধবিষয়ক সংবাদের পেছনে ছুটে বেড়ানোই ক্রাইম রিপোর্টারের কাজ। আর ঘটনার নেপথ্যে লুকিয়ে থাকা অজানা তথ্য খুঁজে বের করে আনতে পারলে একজন ক্রাইম রিপোর্টারের ভালো লাগাটাও বেড়ে যায়। তখন ইচ্ছে জাগে, ওই ঘটনার আরো গভীরে ঢুকে আরো ভালো কিছু আবিষ্কার করার। একটা রিপোর্ট যত বেশি আলোচিত হয়, রিপোর্টারও তত বেশি
পুলকিত হন। তাঁর কাছে সাংবাদিকতা যতটা না পেশা, তার চেয়ে বড় হচ্ছে নেশা। আর এই নেশায় বুঁদ হয়েই ক্রাইম রিপোর্টাররা ছুটে বেড়ান সংবাদ সংগ্রহে। আবার এমনও অনেক সংবাদ থাকে, যার পেছনে রিপোর্টারকে ছুটতে হয় না। সংবাদই ছুটে আসে তাঁর কাছে। আর সেটি হয় আরো চাঞ্চল্যকর সংবাদ।তেমনি একটি সংবাদ হঠাৎ করেই সেদিন ছুটে এল আমার কাছে। ধর্ষণের সংবাদ। প্রথমে মনে হলো, এ আর নতুন কি? প্রতিনিয়তই এসব ঘটছে। প্রকাশও হচ্ছে। আমার মনে হয়, এমন কোনো দিন নেই, যেদিন পত্রিকার পাতায় ধর্ষণের কোনো সংবাদ প্রকাশ পায়নি। তবে ধর্ষণ সংক্রান্ত যে খবরটি সচরাচর চোখে পড়ে না, সেটি হচ্ছে ধর্ষকের শাস্তির সংবাদ।
যেটা বলছিলাম, ঢাকার মহানগর দায়রা জজের আদালত সূত্র থেকে একদিন খবর পেলাম, এক মর্মস্পর্শী ধর্ষণ ঘটনার। এক মা ও তাঁর কলেজ পড়ুয়া মেয়ের ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা।
নেমে পড়লাম মাঠে। কিন্তু ঘটনার গভীরে ঢুকে শিউরে উঠলাম। আঁৎকে উঠলাম। হাহাকার করে উঠলাম। তারপর স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কারণ, এ এমন এক ঘটনা যা বলা যায় না, লেখা যায় না, প্রকাশ করা যায় না সংবাদ আকারে। আমি নিশ্চিত, সেটা করতে পারলে হইচই পড়ে যাবে। বিবেকবানরা প্রতিবাদে ফেটে পড়বেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন। অন্য সংবাদ মাধ্যমগুলোও হুমড়ি খেয়ে পড়বে। কিন্তু শেষমেশ সবাই হাত গুটিয়ে নেবেন। মুখ বুজে যাবেন। সবাই বুঝবেন, কাজটি করলে আরো বেশি সর্বনাশ হয়ে যাবে ওই পরিবারটির।
ঘটনাটি পুরো জানার পর একজন সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে যখন পরামর্শ করলাম, তিনি শুনে অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলেন। বললেন, 'কিসের রিপোর্ট! কিসের মামলা! ধর্ষকদের গুলি করে মারা উচিত।'
ভাবতে বসলাম কী করা যায়। এক সময় ঠিক করলাম, কিছু একটা লিখতেই হবে। অন্যভাবে। হোক না সেটা সাংবাদিকতার সংজ্ঞার বাইরে। সংজ্ঞার চেয়ে বিবেকের তাড়না অনেক বড়। এত কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় না। অসহায় পরিবারটিকে কোনো না কোনোভাবে সহায়তা করতেই হবে। তাই এই লেখা।
লিখতে বসে আবারও হাত থেমে গেল। কারো নামধাম লেখা যাবে না। ঘটনার শিকার মায়ের নাম ধরা যাক অভাগী, মেয়ের নাম হতভাগী; আর অভাগীর ভাইয়ের নাম দুর্ভাগা। এই দুর্ভাগা দেশের একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক। এক নামে সবাই তাঁকে চেনে। মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে গণমাধ্যমের সবাই। তাঁর ছোট বোন অভাগীর সন্তানদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আর মেয়ে হতভাগী কলেজে পড়ে। অভাগী স্বামীর রেডিমেড গার্মেন্টসের ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। বাসায় কর্মচারী রেখে পোশাক তৈরি করে সরবরাহ করেন বাজারে। ছোট ভাইয়ের বন্ধুরাও তাঁকে এ কাজে সহযোগিতা করে।
একদিন ছোট ভাইয়ের দুই বন্ধু এসে অভাগীকে জানাল, কোনো এক স্থানে কিছু কাপড় বিক্রির অপেক্ষায় মজুদ আছে। অভাগী ছোট ভাইয়ের দুই বন্ধুর সঙ্গে ছুটলেন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো এই দুই বন্ধুর একজনের বাসায়। নির্জন জনশূন্য বাসা। ওরা জানাল, বাসার সবাই বেড়াতে গেছে। পাঁচতলা ভবনের এক ঘরে গুদাম। ঘরের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে আছে কাপড়ের স্তূপ। অভাগী হাতড়ে হাতড়ে কাপড় দেখতে লাগলেন। আর ঠিক এ সময়ই গুদাম ঘরের দরজা ভেতর থেকে আচমকা বন্ধ করে দিল ছোট ভাইয়ের এক বন্ধু।
কী ঘটতে যাচ্ছে বুঝে উঠতে পারলেন না অভাগী। পরে যখন বুঝলেন, তখন তিনি চিৎকার দিলেন। কিন্তু নিজের চিৎকারের প্রতিধ্বনি ছাড়া আর কারো সাড়া পেলেন না। ছোট ভাইয়ের দুই বন্ধুকে তিনি আপন ছোট ভাইয়ের মতোই জানতেন। স্নেহ করতেন। এক সময় ওদের পা ধরে সম্ভ্র্রম ভিক্ষা চাইলেন। বললেন, 'বড় বোন মায়ের সমতুল্য।' কিন্তু শত আকুতিতেও কাজ হলো না। ছোট ভাইয়ের বন্ধুদের দ্বারা ধর্ষিত হলেন অভাগী। একজন তাঁকে ধর্ষণ করল, আরেক বন্ধু সেই দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করল। এই নির্যাতনের সাক্ষী হয়ে পড়ে রইল অভাগীর মতো ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া কিছু টুকরো কাপড়ের স্তূপ। অভাগী বাসায় ফিরে এলেন।
অভাগীর ঘরের দেয়ালে একটা বড় ঘড়ি টানানো। সেটার দিকে তাকিয়ে থাকেন অপলক। তাঁর কাছে মনে হয়, ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে না। তবে সময় গড়িয়ে যায়। গড়িয়ে যায় অভাগীর চোখের পানি। কিন্তু থেমে যাচ্ছে জীবনের স্পন্দন। কী ঘটল এসব! ওরা শাসিয়েছে, কাউকে বললে ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে। সিডি করে ছেলে আর মেয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার হাতে পেঁৗছে দেওয়া হবে। অভাগী তাই শুধুই কাঁদেন। কাউকে কিছুই বলেন না। শুধু কাঁদেন আর কাঁদেন। আর সুযোগ পেলেই ওদের কাছে অনুরোধ করেন, ভিডিওর ছবিগুলো ফেরত দিতে। কত শতবার যে অনুরোধ করেছেন, তার হিসাব নেই। তবে হিসাব আছে, ওই ভিডিও ফেরত দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁকে আর কতবার ধর্ষণ করেছে ছোট ভাইয়ের সেই দুই বন্ধু। কিন্তু ফেরত পাননি ভিডিও চিত্র।
দিন যায়। অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে বসেন অভাগী। বাড়ির সবাই জানতে চান, কী হয়েছে। অভাগী কিছুই বলতে পারেন না। কী বলবেন? মেয়ে হতভাগীও মাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিছু একটা যে হয়েছে, বুঝতে পারেন হতভাগী। কিন্তু কী হয়েছে, বুঝে উঠতে পারেন না। একদিন মামার সেই দুই বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় হতভাগীর। মামার বন্ধু, ওরাও মামা। মা হতভাগীকে নিষেধ করেছিলেন ওদের সঙ্গে মিশতে। দুই বন্ধু হতভাগীকে বলে, তারা বিষয়টা জানে। এরপর হতভাগীকে দুই বন্ধু জানায়, তার মা কারো সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল। তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ছবি ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছে। সেই ভিডিও উদ্ধারের আশ্বাস দিয়ে হতভাগীকে বিশেষ একটা দিনক্ষণ বলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে দুই বন্ধু।
বাসায় ফিরে আসে হতভাগী। মুখোমুখি হয় অভাগীর। অগি্নশর্মা। ভাবে, এই কারণেই হয়তো মা তাকে ছোট মামার ওই বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে বারণ করেছিলেন।
মাকে কিছু বলতে গিয়েও বলে না হতভাগী। কী বলবে? কাউকেই কিছু বলে না সে। গোপনে শুধু গুমরে গুমরে কাঁদে। মায়ের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয় হতভাগী। এক ঘরে বসে কাঁদেন হতভাগী, আরেক ঘরে কাঁদেন অভাগী।
এরপর আসে সেই দিনক্ষণ। হতভাগী ছুটে যান ওই দুই জনের কাছে। মায়ের ছবির সিডি দেওয়ার কথা বলে হতভাগীকে ওরা নিয়ে যায় এক নির্জন বাড়িতে। সেখানে ধর্ষিত হন হতভাগীও। সেই একই কায়দায়। ধারণ করা হয় ভিডিও চিত্র। হতভাগীও বাসায় ফিরে আসেন। পরে একাধিকবার ভিডিও চিত্র ফেরত আনতে গেলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। ওই বন্ধুদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে নির্যাতনের পালা। কিন্তু হতভাগী আর ফেরত পায় না ভিডিও সিডি।
এবার বুঝতে পারে হতভাগী। মাকে তাহলে তিনি ভুল বুঝেছিলেন? এটা বুঝলেও হতভাগী বুঝে উঠতে পারেন না, তিনি এখন কী করবেন। অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নিজের ঘরকে তাঁর নরক মনে হয়। একদিন কাউকে কিছু না বলে একটা চিরকুট লিখে ঢাকারই এক মহিলা হোস্টেলে গিয়ে ওঠেন হতভাগী। অনেক বুঝিয়ে তাঁকে আবার বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বাসায় ফিরে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন হতভাগী। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন অনেকটা।
এভাবে কেটে যায় আরো কয়েক মাস। ঘরে চরম অশান্তি। গৃহকর্তাও বুঝে উঠতে পারেন না কী হয়েছে তাঁর স্ত্রী ও কন্যার। এক সময় মা-মেয়ে মুখোমুখি হন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, নিজেদের নিরাপদে রেখে এর একটা বিহিত করবেন। কিন্তু কীভাবে? থানা-পুলিশ করলে জানাজানি হয়ে যাবে। পরিবারের সবারই মরণ ডেকে আনবে এই ঘটনা। কাউকে বলারও জো নেই। হতভাগীর কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। বিয়ে থা হবে না। বন্ধ হয়ে যাবে ভাইয়ের ভবিষ্যৎ। সমাজে মুখ দেখানোর অবস্থা থাকবে না। কিন্তু কাউকে কিছু না বললেও তো আর চলছে না। এ ভাবে আর কতদিন?
শেষ পর্যন্ত পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে ঘটনাটি জানানো হয়। ওই ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পর্ক আছে। আর এভাবেই ঘটনাটি পুলিশের কাছে আসে।
সব জেনে বিস্মিত পুলিশও। কিন্তু তারাই বা কী করবে? মামলায় গেলে ঘটনা কতদিনই
বা গোপন রাখা যাবে? আর জানাজানি হলে এই সমাজ কখনও বলবে না, অভাগী আর হতভাগী পরিস্থিতির শিকার। বলবে না, যা ঘটেছে সেটা নিছক একটা দুর্ঘটনা। বরং ঘটবে এসবের উল্টো।
বিপাকে পড়ে যান পুলিশ কর্মকর্তা। তাই বলে এ ধরনের অপরাধীদের ছেড়েই বা দেবেন কেন? সিনিয়র দুই-একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এতদিন পর অভাগীর উদ্বিগ্ন স্বামী ও সাংবাদিক ভাইকে জানানো হয় ঘটনা। এরপর থানায় মামলা দায়ের হয়, অতি গোপনে। গ্রেপ্তার করা হয় ওই বন্ধুদের তিন জনকে। তাদের আদালতে হাজির করা হয়। সবই হয় অতি গোপনে। একটি মানবাধিকার সংগঠনও হাত বাড়ায় সহযোগিতার। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি ব্যস্ত হয়ে ওঠেন ধর্ষকদের রক্ষা করতে। তারপর জামিন পেয়ে যায় তিন ধর্ষক। এদের একজন একটি বেসরকারি কলেজের আইনের ছাত্র। অন্য দুজন গার্মেন্টসের টুকরো কাপড়ের ব্যবসা করে।লিখতে বসে আবারও হাত থেমে গেল। কারো নামধাম লেখা যাবে না। ঘটনার শিকার মায়ের নাম ধরা যাক অভাগী, মেয়ের নাম হতভাগী; আর অভাগীর ভাইয়ের নাম দুর্ভাগা। এই দুর্ভাগা দেশের একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক। এক নামে সবাই তাঁকে চেনে। মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে গণমাধ্যমের সবাই। তাঁর ছোট বোন অভাগীর সন্তানদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আর মেয়ে হতভাগী কলেজে পড়ে। অভাগী স্বামীর রেডিমেড গার্মেন্টসের ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। বাসায় কর্মচারী রেখে পোশাক তৈরি করে সরবরাহ করেন বাজারে। ছোট ভাইয়ের বন্ধুরাও তাঁকে এ কাজে সহযোগিতা করে।
একদিন ছোট ভাইয়ের দুই বন্ধু এসে অভাগীকে জানাল, কোনো এক স্থানে কিছু কাপড় বিক্রির অপেক্ষায় মজুদ আছে। অভাগী ছোট ভাইয়ের দুই বন্ধুর সঙ্গে ছুটলেন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো এই দুই বন্ধুর একজনের বাসায়। নির্জন জনশূন্য বাসা। ওরা জানাল, বাসার সবাই বেড়াতে গেছে। পাঁচতলা ভবনের এক ঘরে গুদাম। ঘরের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে আছে কাপড়ের স্তূপ। অভাগী হাতড়ে হাতড়ে কাপড় দেখতে লাগলেন। আর ঠিক এ সময়ই গুদাম ঘরের দরজা ভেতর থেকে আচমকা বন্ধ করে দিল ছোট ভাইয়ের এক বন্ধু।
কী ঘটতে যাচ্ছে বুঝে উঠতে পারলেন না অভাগী। পরে যখন বুঝলেন, তখন তিনি চিৎকার দিলেন। কিন্তু নিজের চিৎকারের প্রতিধ্বনি ছাড়া আর কারো সাড়া পেলেন না। ছোট ভাইয়ের দুই বন্ধুকে তিনি আপন ছোট ভাইয়ের মতোই জানতেন। স্নেহ করতেন। এক সময় ওদের পা ধরে সম্ভ্র্রম ভিক্ষা চাইলেন। বললেন, 'বড় বোন মায়ের সমতুল্য।' কিন্তু শত আকুতিতেও কাজ হলো না। ছোট ভাইয়ের বন্ধুদের দ্বারা ধর্ষিত হলেন অভাগী। একজন তাঁকে ধর্ষণ করল, আরেক বন্ধু সেই দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করল। এই নির্যাতনের সাক্ষী হয়ে পড়ে রইল অভাগীর মতো ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া কিছু টুকরো কাপড়ের স্তূপ। অভাগী বাসায় ফিরে এলেন।
অভাগীর ঘরের দেয়ালে একটা বড় ঘড়ি টানানো। সেটার দিকে তাকিয়ে থাকেন অপলক। তাঁর কাছে মনে হয়, ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে না। তবে সময় গড়িয়ে যায়। গড়িয়ে যায় অভাগীর চোখের পানি। কিন্তু থেমে যাচ্ছে জীবনের স্পন্দন। কী ঘটল এসব! ওরা শাসিয়েছে, কাউকে বললে ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে। সিডি করে ছেলে আর মেয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার হাতে পেঁৗছে দেওয়া হবে। অভাগী তাই শুধুই কাঁদেন। কাউকে কিছুই বলেন না। শুধু কাঁদেন আর কাঁদেন। আর সুযোগ পেলেই ওদের কাছে অনুরোধ করেন, ভিডিওর ছবিগুলো ফেরত দিতে। কত শতবার যে অনুরোধ করেছেন, তার হিসাব নেই। তবে হিসাব আছে, ওই ভিডিও ফেরত দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁকে আর কতবার ধর্ষণ করেছে ছোট ভাইয়ের সেই দুই বন্ধু। কিন্তু ফেরত পাননি ভিডিও চিত্র।
দিন যায়। অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে বসেন অভাগী। বাড়ির সবাই জানতে চান, কী হয়েছে। অভাগী কিছুই বলতে পারেন না। কী বলবেন? মেয়ে হতভাগীও মাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিছু একটা যে হয়েছে, বুঝতে পারেন হতভাগী। কিন্তু কী হয়েছে, বুঝে উঠতে পারেন না। একদিন মামার সেই দুই বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় হতভাগীর। মামার বন্ধু, ওরাও মামা। মা হতভাগীকে নিষেধ করেছিলেন ওদের সঙ্গে মিশতে। দুই বন্ধু হতভাগীকে বলে, তারা বিষয়টা জানে। এরপর হতভাগীকে দুই বন্ধু জানায়, তার মা কারো সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল। তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ছবি ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছে। সেই ভিডিও উদ্ধারের আশ্বাস দিয়ে হতভাগীকে বিশেষ একটা দিনক্ষণ বলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে দুই বন্ধু।
বাসায় ফিরে আসে হতভাগী। মুখোমুখি হয় অভাগীর। অগি্নশর্মা। ভাবে, এই কারণেই হয়তো মা তাকে ছোট মামার ওই বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে বারণ করেছিলেন।
মাকে কিছু বলতে গিয়েও বলে না হতভাগী। কী বলবে? কাউকেই কিছু বলে না সে। গোপনে শুধু গুমরে গুমরে কাঁদে। মায়ের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয় হতভাগী। এক ঘরে বসে কাঁদেন হতভাগী, আরেক ঘরে কাঁদেন অভাগী।
এরপর আসে সেই দিনক্ষণ। হতভাগী ছুটে যান ওই দুই জনের কাছে। মায়ের ছবির সিডি দেওয়ার কথা বলে হতভাগীকে ওরা নিয়ে যায় এক নির্জন বাড়িতে। সেখানে ধর্ষিত হন হতভাগীও। সেই একই কায়দায়। ধারণ করা হয় ভিডিও চিত্র। হতভাগীও বাসায় ফিরে আসেন। পরে একাধিকবার ভিডিও চিত্র ফেরত আনতে গেলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। ওই বন্ধুদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে নির্যাতনের পালা। কিন্তু হতভাগী আর ফেরত পায় না ভিডিও সিডি।
এবার বুঝতে পারে হতভাগী। মাকে তাহলে তিনি ভুল বুঝেছিলেন? এটা বুঝলেও হতভাগী বুঝে উঠতে পারেন না, তিনি এখন কী করবেন। অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নিজের ঘরকে তাঁর নরক মনে হয়। একদিন কাউকে কিছু না বলে একটা চিরকুট লিখে ঢাকারই এক মহিলা হোস্টেলে গিয়ে ওঠেন হতভাগী। অনেক বুঝিয়ে তাঁকে আবার বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বাসায় ফিরে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন হতভাগী। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন অনেকটা।
এভাবে কেটে যায় আরো কয়েক মাস। ঘরে চরম অশান্তি। গৃহকর্তাও বুঝে উঠতে পারেন না কী হয়েছে তাঁর স্ত্রী ও কন্যার। এক সময় মা-মেয়ে মুখোমুখি হন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, নিজেদের নিরাপদে রেখে এর একটা বিহিত করবেন। কিন্তু কীভাবে? থানা-পুলিশ করলে জানাজানি হয়ে যাবে। পরিবারের সবারই মরণ ডেকে আনবে এই ঘটনা। কাউকে বলারও জো নেই। হতভাগীর কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। বিয়ে থা হবে না। বন্ধ হয়ে যাবে ভাইয়ের ভবিষ্যৎ। সমাজে মুখ দেখানোর অবস্থা থাকবে না। কিন্তু কাউকে কিছু না বললেও তো আর চলছে না। এ ভাবে আর কতদিন?
শেষ পর্যন্ত পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে ঘটনাটি জানানো হয়। ওই ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পর্ক আছে। আর এভাবেই ঘটনাটি পুলিশের কাছে আসে।
সব জেনে বিস্মিত পুলিশও। কিন্তু তারাই বা কী করবে? মামলায় গেলে ঘটনা কতদিনই
বা গোপন রাখা যাবে? আর জানাজানি হলে এই সমাজ কখনও বলবে না, অভাগী আর হতভাগী পরিস্থিতির শিকার। বলবে না, যা ঘটেছে সেটা নিছক একটা দুর্ঘটনা। বরং ঘটবে এসবের উল্টো।
দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির হস্তক্ষেপ আর জামিনের ঘটনায় অবাক হয়ে যায় অসহায় পরিবারটি। হতবাক হয় পুলিশও। আইনজীবীরাই বা কী করবেন? আদালতে তাঁরা সোচ্চার হতে পারেন না, জানাজানির ভয়ে। একই কারণে প্রচারমাধ্যমকে জানানো যাবে না। পুলিশকেও কাজ করতে হচ্ছে গোপনে। একটু ভুল হলেই অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
যোগাযোগ করি ওই মানবাধিকার সংস্থার প্রধানের সঙ্গে। তিনি বললেন, সমাজ আর বাস্তবতার নিরিখে এ ব্যাপারে এই মুহূর্তে তিনি কিছুই বলতে ইচ্ছুক নন। একটা সুন্দর সময়ের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। প্রয়োজন হলে তিনি মুখ খুলবেন।
এদিকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে গেছে ধর্ষকরা। তারা এর প্রতিশোধ নেবে বলে হুমকি দিচ্ছে। হুমকি পেয়ে হতভাগী আর অভাগী আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না। তাঁরা এখন নিজ ঘরে বন্দি। বাইরে বের হতে ভয় পান। কী করবেন এখন এই দুই নির্যাতিতা?
এদিকে অভাগীর ভাই দুর্ভাগার অবস্থাও কম করুণ নয়। অসহায় মানুষের অধিকার আদায়ে যিনি সোচ্চার, তিনিই আজ সবচেয়ে অসহায়। কতজনার সংবাদ পরিবেশন করেন তিনি! কত মানুষের কত সুখ-দুঃখের কথা বলেন! কত অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে ফেটে পড়েন সাংবাদিকতার হাতিয়ার নিয়ে! অথচ নিজের ঘরে আজ যে মর্মন্তুদ সংবাদ রচিত হয়েছে, তা তিনি চাপা দিয়ে রেখেছেন নীরব কান্নায়। সব রাগ, সব ক্ষোভ, সব আগুন আজ কষ্ট হয়ে গলে পড়ে চোখের জলে। একজন সাংবাদিকের জীবনে এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে?
============
এই ধরনের দূর্ভাগ্য আর কোন পরিবারে নেমে না আসুক সেটাই সবার কামনা। সেই সাথে আমাদের নিজেদেরও সতর্ক হতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে এবং সংযত হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং প্রতিবাদী হতে হবে। চুপ করে সহ্য করে গেলে সর্বনাশ হতে পারে অন্য কারোও।
সংগৃহীত:-http://www.facebook.com/notes/syed-ayon/প্রতিটি-মেয়ে-এই-লেখাটি-পড়লে-ভাল-হয়/320508451308364সংগৃহীত
0 comments:
Post a Comment